গণশুনানি, ‘এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) , (সনদ নং: ০২২৯)’
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির উদ্যোগে ২৯/০১/২০২২ তারিখে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ‘এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি)’ (সনদ নং- ০৩০৭৪-০৪৬১৬-০০২২৯) এর শরীয়তপুরস্থ প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের সাথে সরাসরি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত গণশুনানীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অথরিটির নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ হুমায়ূন কবীর, বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন অথরিটির পরিচালক সুতপা চৌধুরী, এছাড়াও উপপরিচালক সর্বজনাব মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মোঃ আব্দুল হক, সহকারী পরিচালক জনাব স্বরুপ আচার্য্য, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেট মোঃ হাসিদুর রশীদ। ‘এসডিএস’ এর নির্বাহী পরিচালক জনাব রাবেয়া বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২৮ জন গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন। জনাব মোঃ হুমায়ূন কবীর গণশুনানির উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা, গ্রাহকদের ঋণগ্রহণ প্রক্রিয়া, ঋণের ব্যবহার, সার্ভিস চার্জের হার, কিস্তি সংখ্যা, ঋণের ওভারল্যাপিং, গ্রাহকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ সন্তানদের পড়াশুনা, শিশুদের টিকা প্রদান, কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ, স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন। জনাব সুতপা চৌধুরী প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে “এসডিএস” প্রতিষ্ঠানকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করার জন্য আহবান জানান। এছাড়া কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, পশুপালন ইত্যাদি বিষয়ে গ্রাহকদের কারিগরি সহায়তা দেয়ার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি গ্রাহকদের নিয়মিত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রদান ও আদায় কার্যক্রমে সহায়তা করার পরামর্শ প্রদান করেন। সভায় উপস্থিত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সমিতির সদস্য জনাব নাজনিন আক্তার, হালিমা বেগম, আলেয়া বেগম, নাহিদা আক্তারসহ অন্যান্য সদস্যগণ তাদের আপদকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রশংসা করেন এবং এর পাশাপাশি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহককে গবাদি পশু, হাঁস মুরগী পালন, সেলাই প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন। উল্লেখ্য যে, উক্ত এলাকায় এসডিএস প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সল্প সুদে (ক্রমহ্রাসমান ১২%) গ্রাহকদের গৃহঋণ প্রদান করে থাকে যা শরীয়তপুরের মতো নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকার মানুষের জন্য খুবই কার্যকর ঋণ প্রক্রিয়া। শরীয়তপুর পালং শাখার সদস্য ইয়াসমিন আক্তার তার কাসা-পিতল এর ব্যবসার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় ১ লক্ষ টাকা মর্মে জানান। এছাড়াও নাজনিন আক্তার, রুনা আক্তার, নাহিদা আক্তারসহ অন্যান্য সদস্যগণ প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ ও অন্যান্য কৃষি পণ্যের ব্যবসা করেন এবং বর্তমানে তারা সবাই সফল উদ্যোক্তা। এভাবে সকল সদস্য প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে বর্ণনা ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গ উল্লেখ্য যে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের শরীয়তপুর পালং শাখার সেলিনা আক্তারসহ আরো কয়েক জন সদস্য অথরিটির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত প্রস্তাবসমূহ পেশ করেন:
(১) ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মাসিক ঋণের গ্রেস পিরিয়ডের কমপক্ষে ২/৩ মাস করা;
(২) মাসিক ঋণের মেয়াদ (Tenure) ৩/৪ বছর করা;
(৩) ঋণের সার্ভিস চার্জ হ্রাসকরণ;
(৪) গ্রাহকের প্রকল্প ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ঋণের সিলিং নির্ধারণ যাতে গ্রাহককে একইসাথে একাধিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণ করতে না হয়;
(৫) ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে ঋণ গ্রহণ করে ব্যবসা পরিচালনায় বিক্রিত পণ্যের উপর ভ্যাটের হার কমানোর প্রস্তাব করেন।
তবে গ্রাহকদের আমানতের সুদ, সার্ভিস চার্জ হিসাবায়ন ও তাদের ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতা বিষয়ে সুষ্পষ্ট ধারণা তৈরীর জন্য গ্রাহক পর্যায়ে আর্থিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে সেক্টর প্রতিনিধিদের আরো মনোযোগী হওয়ার সুযোগ রয়েছে মর্মে জনাব সুতপা চৌধুরী সভাকে অবহিত করেন।
পরিশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান এবং দেশের বর্তমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা বিষয়ে পরিচালক মহোদয় গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করেন। সর্বশেষে সভাপতি জনাব রাবেয়া বেগম সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণশুনানি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
বর্ণিতাবস্থায়, উপরোলিখিত প্রস্তাবসমূহের গুরুত্ব বিবেচনা করে গ্রাহক বান্ধবকরণে অথরিটি কর্তৃক বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
(মোঃ হুমায়ূন কবীর)
নির্বাহী পরিচালক
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি